বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র ১২তম সাধারণ পরিষদের সভা ১৫ই জুলাই, ২০২৩ শনিবার (সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত) দিনব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ ও মধুর ক্যান্টিনের মাঝে) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়।
বাপা’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার এর সভাপতিত্বে এবং বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিবের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ বিষয়ক বিশেষ দূত এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, জনাব সাবের হোসেন চৌধুরী, এমপি।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, ড. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক এম. ফিরোজ আহমেদ, ড. আতিউর রহমান, প্রকৌশলী তাকসীম এ. খান, অধ্যাপক এমএম আকাশ, অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান প্রমূখ।
আমান্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের সাড়াপোল গ্রামের গাছ বন্ধু ওয়াহিদ সরদার।
এতে বাপা সকল সদস্যসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, গোটা বিশ্বে পরিবেশের সাথে যে যুদ্ধ হচ্ছে তা শেষ হওয়া দরকার। কোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহন করার আগে সংবিধানের অনুচ্ছেদের ১৮ (ক)’র চশমা দিয়ে দেখতে হবে। তবেই পরিবেশ রক্ষা পাবে। ঢাকায় যে বায়ুদূষণ হয় তার ৩৫% ভারতের কারনে, সুতরাং আমাদের ট্রান্সবাউন্ডারী বিষয়গুলো দিয়েও কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন শহরের বর্জ্যগুলোকে কাজে লাগিয়ে জৈব্য সার তৈরী করতে পারলে আনেক সারের চাহিদা কমে যাবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, দেশের সার্বিক পরিবেশ উন্নয়ন ও সুরক্ষার জন্য জনমত তৈরি এবং আন্দোলনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা। দীর্ঘ বাইশ বছরের পথ পরিক্রমায় নিরবিচ্ছিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে জনসাধারনের নিকট এখন বাপা একটি সুপরিচিত নাম। এরই মধ্যে জনমনে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতাও বেড়েছে অনেক। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান নিয়ে প্রচার – প্রচারনা ও আন্দোলনের ফলে অনেক মানুষ সক্রিয় হয়েছে পরিবেশ সুরক্ষায়, গড়ে তুলছে নিজ নিজ এলাকায় বাপা। বাপা’র আন্দোলনের সফল দিক হল সরকার ও প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করেছে।
স্বাগত বক্তব্যে আলমগীর কবির বলেন, দেশ এবং বিশ্বে পরিবেশের আজকের যে অবস্থা তার বিপরীতে ব্যক্তি থেকে সমাজ থেকে দেশ কতটা ওষ্ঠাগত? কতটা পরাজিত? কতটা প্রস্তুত? সেই প্রশ্নগুলোকে সামনে রেখেই আমাদের নির্ভয়ে এগিয়ে চলার আজ নব অধ্যায়ের সূচনা করতে হবে। ‘সম্মিলিত সংকল্পে ঘুরে দাঁড়ানোর এখনই সময়’, এই প্রত্যয়ে বলিয়ান হয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন আজকে তার সাধারণ সভার এ আয়োজনে একত্রিত হয়েছে। সেই ঐক্যতান সৃষ্টির জন্য, যার মধ্যে দিয়ে প্রবল বিশ্বাস, অন্তর্গত অভিপ্রায়ের শক্তিশালী প্রকাশ এবং বিশ্বাসী মানুষের সম্মিলিত যাত্রার মধ্যে দিয়ে লক্ষ্য অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে নব উদ্দমে ঝাপিয়ে পড়হে হবে দেশের পরিবেশ রক্ষায়।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, আমাদের মানব ও প্রকৃতির মুক্তির প্রয়োজন। এমন লোকের বড়ই অভাব। নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছাকেই দায়ী করেন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা এমন জনসাধারণের সচেতনতাই পারে দেশের পরিবেশ রক্ষা করতে। তাই তিনি সকলতে সমন্বয় করে কাজ করার আহ্বান জানান। পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি আজ শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাই। সারা বিশ্বেই এর প্রভাব পরিলক্ষিত। তিনি সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে খরা মৌসুমে সেচের ব্যবস্থা করলে প্রায় ৮১ লক্ষ ব্যারেল ডিজেল বাঁচবে বলে মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বলেন, পরিবেশ যে ভাবে ধংস হচ্ছে তা দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবী নামক গ্রহটি অচিরেই ধংস হয়ে যাবে। বাংলাদেশ এসডিজি অর্জনে কাজ করছে। এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের ১৭টির মধ্যে ১১টিই পরিবেশ নিয়ে। আমরা আশা করি রাজনৈতিক উইং দেশের পরিবেশ রক্ষায় কাজ করবে আর এ কাজে বাপা সরকারকে সবসময় সহযোগীতা করে যাবে।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বাপা-বেন এক বৃহৎ পরিবারে রূপান্তরিত হয়েছে। বাপা’র ১৫তম জাতীয় সাধারণ সভার মধ্য দিয়ে আগামীতে বাপা-বেন সহযোগিতা আরও দৃঢ় ও প্রসারিত হবে এবং তার ফলে বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষার সংগ্রামে আরও সাফল্য অর্জিত হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
গাছ বন্ধু ওয়াহিদ সরদার বলেন, দেশের গাছগুলো নষ্ট হচ্ছে সরকারের অবহেলায়। ডিসিগন গাছ রক্ষা বেশ উদাসিন। তিনি আরো বলেন দেশের প্রায় আটটি জেলারে বিভিন্ন রাস্তার ধারে থাকা গাছ থেকে ব্যানার, পেরেক অপসারণ করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন রাস্তার গাছ থেকে ১৪ মন পেরেক তুলেছেন এবং ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিজ খরচে এবং বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় প্রায় ২৬ হাজার গাছ লাগিয়েছেন। তিনি গাছের নিরাপত্তার সার্থে গাছে পেরেক মারার বিরুদ্ধে আইন করা এবং এই বিষয়টি পাঠ্য বইয়ে অন্তভূক্ত করার দাবী জানান। একই সাথে তিনি বাপা’র কর্মকান্ডের সাথে দেশের যুব সমাজকে যুক্ত করার আহ্বান জানান।