জাইকার অর্থায়নে কক্সবাজারের কোহেলীয়া নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও জাতীয় নদী জোট-এর যৌথ উদ্যোগে ২৩ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার সকাল ১১.০০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সাগর-রুনি মিলনায়তন, সেগুনবাগিচা, ঢাকায় “জাইকার অর্থায়নে কক্সবাজারের কোহেলীয়া নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের” প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় নদী জোটের আহ্বায়ক ও ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। এতে আরো বক্তব্য রাখেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ও হুমায়ুন কবির সুমন, জাতীয় নদী জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সেবা’র নির্বাহী পরিচালক সাঈদা রোকসানা খান শিখা এবং যুব বাপা কর্মসূচির সদস্য সচিব সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী রাওমান স্মিতা প্রমূখ।

সভাপতির বক্তব্যে শারমীন মুরশিদ বলেন, দেশে নদী রক্ষায় আইন আছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন নাই। আইন মানার প্রবনতা সবার মাঝে তৈরী করা সরকারের দায়িত্ব। জেলা প্রশাসকদের জবাবদিহীতার আওতায় আনতে হবে। তারা কেন হাইকোর্টের রায় থাকার পরেও দেশের নদীগুলো রক্ষা করতে পারছে না। তিনি জাইকার নীতির উদৃতি দিয়ে বলেন, JICA is determined to protect our global environment that is extremely vital for the survival of mankind and natural life on earth. It also seeks the balance among environmental conservation, social prosperity and sustainable development….JICA will consistently adhere to relevant environmental laws and regulations, oct 1, 2015.

জাপানীদের শক্ত এ পরিবেশ নীতির কথা উল্লে করে তিনি বলেন কখনো তারা নদী ধ্বংস করে এমন ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প নিজদেশে করবে না। তবে কেন বাংলাদেশে তারা নীতি বিরোধী কাজ করছে। এটা আমরা মানতে পারি না। আদালত আমাদের নদীগুলোকে জীবন্ত স্বত্ত্বা হিসেবে ঘোষণা করেছে তাই কোহেলীয়া নদীর সাথে যা হচ্ছে তা ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত।

শরীফ জামিল মূল বক্তব্যে গত ১৬-১৭ জানুয়ারি ২০২১, তারিখে বাপা এবং জাতীয় নদী জোট-এর যৌথভাবে পরিচালিত সরজমিনে পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত তুলে ধরেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)সহ দেশের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসমূহ দেশের আদালত প্রচলিত অনেক আইন, অধ্যাদেশ ও সরকারী নির্দেশনার উপেক্ষা করে চলমান দখল, দূষণ ও অন্যান্য নদী বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে নদী-বিপর্যয় এতই মারাত্মক আকার ধারণ করে যে, মহামান্য উর্চ্চ আদালত নদী রক্ষায় কয়েকটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেন। সুপ্রিম কোর্টের ২০২০ সালে দেয়া নদী বিষয়ক রায় অনুযায়ী নদীর জমি কোন অবস্থায়ই কারো কাছে বিক্রয় বা লীজ দেয়া যাবেনা, ভরাট করাতো ঘুরতর অপরাধ ।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, গত এক হাজার বছরে পনেরো’শ নদী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গড়ে প্রায় 1.5টি নদী। আমরা উন্নয়ন চাই কিন্তু পরিবেশ ও নদীকে ধ্বংস করে নয়। যেখানে সরকার কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প কমিয়ে আনছে সেখানে সেই জাইকা কিভাবে এধরনের কাজের অনুমোদন পায়। তিনি আরো বলেন চট্রগ্রামের চেয়ে কক্সবাজারে বায়ুদূষণের পরিমান অনেক বেশী এ অবস্থা চলতে থাকলে বিশ্বের সব চেয়ে বৃহৎ সমুদ্র সৈকত পর্যটক শূণ্য হয়ে যাবে।

সাঈদা রোকসানা খান শিখা বলেন, নদীর জমি অধিগ্রহন করে রাস্তা নির্মান এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না। সেখানকার দুই হাজার পরিবার না খেয়ে দিনাতি পাত করছে।আর তাদের উপার্জনের পথ বন্ধ করে নদী ধ্বংস করে উন্নয়ন করা হচ্ছে এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। সমাজ ও পরিবেশকে রক্ষা করেই উন্নয় হতে হবে।

 

সংবাদ সম্মেলন থেকে নিম্ন লিখিত দাবীসমূহ উত্থাপন করা হয়ঃ

১। অবিলম্বে নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে হবে।

২। নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ কাজের স্বচ্ছ তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দিতে হবে।

৩। কোহেলিয়া নদী ও তৎসংলগ্ন সকল খাল ও প্লাবন অঞ্চল পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করতে হবে।

৪। যেকোন বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণের আগে সমন্বিত, বিজ্ঞানভিত্তিক, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

৫। আদালতের রায় যথাযথভাবে মেনে কোহেলিয়াসহ দেশের সকল নদী ও জলাশয় পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করতে হবে।

 

Share:

More Activities

BAPA 12th AGM-2023

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র ১২তম সাধারণ পরিষদের সভা ১৫ই জুলাই, ২০২৩ শনিবার (সকাল ১০টা থেকে

Scroll to Top